পেঁপে চাষে সঠিক ভাবে জমি তৈরি করলে ৫০ % বেশি ফলন ফলানো সম্ভব
পেঁপে বিশ্বের অন্যতম প্রধান ফল। সবজি হিসেবেও এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। পেঁপে অত্যন্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং ওষুধি গুনসম্পন্ন। বৃহত্তর রাজশাহী, পাবনা, রংপুর, নাটোর, নরসিংদী, খুলনা ও যশোরে বেশি পেঁপে উৎপাদিত হয়। বর্তমানে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁপের চাষ হয় এবং মোট উৎপাদন প্রায় ৪০ হাজার টন কিন্তু তা আমাদের চাহিদার মাত্র ১/৫ অংশ পূরণ করে।
তুলনামুলকভাবে পাকা পেঁপে কাঁচা পেঁপের চেয়ে পুষ্টিমানের দিক থেকে উন্নত। আমের পরই ক্যারোটিন বা ভিটামিন এ এর প্রধান উৎস হল পাকা পেঁপে। এছাড়া ক্যালসিয়াম ও খনিজ লবন প্রচুর পরিমানে থাকে। কাঁচা পেঁপেতে পেপেইন নামন হজমকারী দ্রব্য থাকে যা রোগীর পথ্য। কাঁচা পেঁপেতে বেশি আয়রন থাকে।
পেঁপে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার যেমন হালুয়া, পায়েশ, চাটনি, আচার, স্যুপ ও সালাদ ইত্যাদি তৈরী করা যায়।
জলবায়ু ও মাটি
উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় পেঁপে ভাল জন্মে। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় পেঁপে সর্বত্রই লাভজনক ভাবে চাষ করা যেতে পারে। পানি দাঁড়াতে পারেনা এমন উর্বর জমি পেঁপের জন্য নির্বাচন করতে হয়।
পেঁপের জাত
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট শাহী পেঁপে (বারি পেঁপে-১) নামে একটি পেঁপের জাত ১৯৯২ সালে উদ্ভাবন করেছে। এছাড়া ওয়াশিংটন, হানিডিউ, রাঁচি, ইত্যাদি জাতের চাষ হয়ে থাকে। পুষাজায়েন্ট, পুষা ম্যাজেষ্টি, সলো ইত্যাদি জাতগুলো উল্লেখযোগ্য।
বংশ বিস্তার
সারা বিশ্বে পেঁপের বংশবিস্তার বীজ দ্বারাই হয়। বীজের গায়ে যে পিচ্ছিল পদার্থ ( Aril) থাকে তা অঙ্কুরোদগম রোধ করে। সুতরাং পাকা ফল থেকে বীজ সংগ্রহের পর ছাইয়ের সাথে মিশিয়ে পাটের বস্তার উপর ঘষে পানিতে ধুয়ে নিলে পিচ্ছিল পদার্থ চলে যায়। এর পরপরই বীজ রোপণ করলে দু’সপ্তাহের মধ্যে চারা বের হয়। বীজ পরিষ্কার করার পর ভালভাবে শুকিয়ে নিচ্ছিদ্র পাত্রে (যাতে বাতাস ঢুকতে পারে না) সংরক্ষণ করলে অনেক বছর ধরে বীজ ভাল থাকে। সংরক্ষণ করা বীজের অংকুরোদগম হতে দুই থেকে চার সপ্তাহ সময় নেয়। বীজতলায় বীজ না ফেলে সরাসরি ছোট ছোট পলিব্যাগে ও রোপণ করা হয়। প্রতি পলিব্যাগে ৪-৫ টি বীজ ফেলা হয় এবং বীজ গজানোর পর ৩ টি চারাকে বাড়তে দিতে হয়। বীজ তলায় চারা উৎপাদনের বেলায় ১০-১৫ সে.মি উঁচু ১ x ৩ মি. আকারের বীজতলা তৈরী করতে হয়। বীজ তলার মাটির মিশ্রণ হবে এক-তৃতীয়াংশ জৈব সার, এক-তৃতীয়াংশ বালি এবং এক-তৃতীয়াংশ মাটি। এর সাথে ৫০০ গ্রাম টিএসপি সার মিশালে ভাল হয়। এরকম বীজতলায় ১ সে.মি মাটির গভীরে বীজ ফেলার পর ঝরনা দিয়ে পানি দিতে হয়। চারা না গজানো পর্যন্ত বীজতলা ১৫ সে.মি উঁচু করে খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া ভাল। ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে চারা বের হয়। বীজ বপনের পর ৫০-৬০ দিনের বয়সের চারা জমিতে রোপণের উপযুক্ত হয়। সাধারণত জুন – জুলাই এবং অক্টোবর – নভেম্বর মাস পেঁপের চারা উৎপাদন সময়। এক হেক্টর জমিতে রোপণের জন্য প্রায় ২০০ গ্রামে বীজের প্রয়োজন হয়।
জমি তৈরি
জমি ভালভাবে চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে সমতল করতে হবে ও পানি সরে যাওয়ার জন্য নালা রাখতে হবে যাতে করে জমি সুনিস্কাশিত হয়।
রোপণ সময়
বছরের যে কোন সময় পেঁপে রোপণ করা যায় অথবা সেচের সুবিধা থাকলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর অথবা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারী মাসে রোপণ করা যায়। নচেৎ মৌসুমী বৃষ্টি শুরু হলে মে মাসে রোপণ করা উত্তম।
চারা রোপণ পদ্ধতি
পেঁপের জন্য প্রচুর সূর্যের আলো প্রয়োজন। এ জন্য ২ x ২ মি. দূরত্বে কাঠি পুঁতে রোপণের জায়গা চিহ্নিত করতে হবে। তারপর কাঠিটিকে কেন্দ্র করে ৬০ x ৬০ সে.মি আকারের ৬০ সে.মি গভীর গর্ত তৈরি করে গর্তে সার ও মাটি মিশিয়ে চারা রোপণের উপযুক্ত করতে হবে। প্রতি গর্তে তিনটি করে চারা ২০ সে. মি দূরত্বে ত্রিভুজাকারে রোপণ করতে হয়। প্রতি হেক্টরে ৭৫০০ টি চারার প্রয়োজন।
সার প্রয়োগ
সারের নাম পরিমাণ
(গাছ প্রতি) গর্তে দেয় পরবর্তী পরিচর্যা হিসাবে দেয়
নতুন পাতা আসলে ফুল আসলে
১ম কিস্তি ২য় কিস্তি ৩য় কিস্তি ১ম কিস্তি ২য় কিস্তি ৩য় কিস্তি
গোবর ১২-১৬ কেজি (৬ কেজি শেষ চাষে) ৬ কেজি – – – – – –
ইউরিয়া ৪৫০-৫৫০ গ্রাম – ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম
টি এসপি ৪৫০-৫৫০ গ্রাম সব – – – – – –
এম পি ৪৫০-৫৫০ গ্রাম – ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম
জিপসাম ২৪৫-২৫০ গ্রাম সব – – – – – –
বোরাক্র ২০-৩০গ্রাম সব – – – – – –
জিংক সালফেট ১৫-২০ গ্রাম সব – – – – – –
*মাটির উর্বরতা ভেদে সার ও তার পরিমাণ কম বেশী হতে পারে।