করমচা, টক জাতীয় গ্রীষ্মকালীন ফলের নাম। এর বৈজ্ঞানিক নাম ক্যারিসা ক্যারোন্ডাম। কনটোরটি বিভাগে অ্যাপোসাইনেসি শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করমচা ফলের আদি নিবাস ক্যারোনডাস প্রজাতির ভারতবর্ষ, গ্রান্ডিফ্লোরা প্রজাতির দক্ষিণ আফ্রিকা এবং এডুইলিস প্রজাতির মিসরে। তবে ভারতবর্ষে এসব প্রজাতির করমচা দীর্ঘদিন ধরে চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় সমতল ভূমিতে করমচা চাষ করা যায়। অ্যাপোসাইনেসি শ্রেণীতে ১৫৫ বর্ণের প্রায় এক হাজার গোত্রের করমচা গাছ দেখা যায়।
দক্ষিন চব্বিশ পরগনা জেলার ভাঙর ২ নম্বর ব্লকের অনন্তপুর গ্রামের কৃষক মিজানুর আলম গত পঁচিশ বছর ধরে করমচা চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছেন। বিভিন্ন জেলা থেকে তার জমিতে করমচা চাষ দেখতে আসছেন কৃষকরা। এবছর সাড়ে তিন বিঘা জমিতে করমচা চাষ করেছেন। কৃষি বার্তার প্রতিনিধি হয়ে জানতে গিয়েছিলাম করমচা চাষের পদ্ধতি। জমিতে দাড়িয়ে মনে হচ্ছিল কাশ্মীÍ কোনো ফলের বাগানে দাড়িয়ে আছি।চাষ পদ্ধতি জানাতে গিয়ে মিজানুর বাবু বললেন ১ বিঘা জমিতে ১০০ চারা বসানো যায়। ৩ বছর পর থেকে গাছে ফল আসতে শুরু করে। ৫ বছর পর্যন্ত মিশ্র চাষ হিসাবে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা যায়। নিচু জমি হলেও কোনো অসুবিধা হয় না। সার ও জলসেচ খুব কম লাগে।সারা বছরের মধ্যে ৩ মাস পরিচর্যা করা লাগে। একটা ৬ বছরের গাছ থেকে গড়ে ২০ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।বছর্ েএকবার বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ মাসে ফল বাজারজাত করা হয়। এক কেজি ফলের দাম ২৬ টাকা। করমচা প্রসেসিং করে বাজারে চেরী ফল হিসাবে বিক্রি হয়।
মাটি :
বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় সমতল ভূমিতে করমচা চাষ করা যায়। করমচা চাষে জমি উঁচু হলে ভালো হয়, তবে নিচু জমিতেও চাষ করা যায় যদি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকে।
ফুল ও ফল :
করমচা গাছ বেশ ঝোপতলা ধরনের শক্ত জাতের কাঁটাওয়ালা গুল্ম। বড় সাদা ও ফিকে গোলাপি রঙের সুমিষ্ট গন্ধযুক্ত করমচা ফুল দেখতে কিছুটা কুন্ধ ফুলের মতো। এর ফলের রঙ কাঁচায় গাঢ় সবুজ, পাকায় লাল হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে গাছে ফুল আসে এবং ফল ধরে এপ্রিল-মে মাসে। বর্ষায় ফল পাকে।
রোপন পদ্ধতি :
করমচা চাষে জমি উঁচু হলেই ভালো, তবে নিচু জমিতেও চাষ করা চলে যদি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ভালো থাকে।
বর্ষাকালে চারা রোপণ করা ভালো। গাছ লাগানোর ১৫-২০ দিন আগ থেকে গর্ত তৈরি করতে হবে। বাগানে চাষ করতে হলে গর্ত তৈরির আগে ৩০ সেন্টিমিটার গভীর করে জমি চাষ দিয়ে নিতে হবে। গর্তের মাঝখানে চারা বসিয়ে সেচ দিতে হবে। চারার গোড়ায় মাটি শক্তভাবে চেপে দিতে হবে, যাতে গাছ পড়ে না যায়।
করমচা গাছের যত্নঃ
এতে বেশি যত্নের প্রয়োজন হয় না।করমচা গাছের পরিচর্যার ক্ষেত্রে ফল শেষ হয়ে যাওয়ার পর ঘন ডালপালা ছেঁটে কিছু হালকা করে দেওয়া দরকার। গোড়ার মাটি একটু উঁচু করে দিতে হবে। যাতে বৃষ্টির পানি না দাঁড়ায়। করমচা খুব শক্ত ধরনের গাছ এবং দেহে আঠালো রস থাকায় রোগ ও পোকায় সহজে আক্রমণ করতে পারে না। তবে ফলের ছোট অবস্থায় পোকা ভেতরে ঢুকে শাঁস খেয়ে ফেলে।
করমচার ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ। এ ফলের অনেক গুণ। করমচা ফলের মধ্যে রয়েছে ১৮.২ ভাগ জলীয় রস, ২.৩ ভাগ প্রোটিন, ২.৮ ভাগ খনিজ, ৯.৬ ভাগ স্নেহ, ৬৭.১ ভাগ শর্করা। এছাড়া খনিজের মধ্যে ক্যালসিয়াম ০.১৬ ভাগ, ফসফরাস ০.৬ ভাগ এবং লৌহ ৩৯.১ ভাগ। প্রতি ১০০ গ্রাম করমচা থেকে পাওয়া যায় ৩৬৪ ক্যালরি তাপ, ২০০.৯৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি।
0 commenti:
Posta un commento